ডুমুরিয়ার সবজি যাবে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে আশরাফুল ইসলাম নূর | প্রকাশিত ৩০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:২৬:০০ বিভাগীয় সদর খুলনার শস্য ভান্ডার খ্যাত ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে তরতাজা সবজি রপ্তানি হবে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এতে কৃষি অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনাময় প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিএফভিএপিইএ, এফবিসিসিআই’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ডুমুরিয়া সবজি ক্ষেত সরেজমিন পরিদর্শন শেষে কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ডুমুরিয়া থেকে অন্তত ১৫টি সবজি রপ্তানি হবে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোর থেকে ছয় মেট্রিক টন সবজি পাঠানো হয়েছে ইউরোপে। সূত্রে জানা গেছে, ডুমুরিয়ার কৃষকদের কাছ থেকে গ্রীষ্মকালীন সবজি রপ্তানি করবে রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে পটল, কুশি (চিচিঙ্গা), ঝিঙা, লাউ, মিষ্টি ও চাল কুমড়া, লাল শিম, শসা, পেঁপে, ধুন্দুল, কাঁচা কলা, কচুর মুখি ও লতি, কাকরোল ও বেগুন রপ্তানি হবে। সফল প্রকল্পের আওতায় ডুমুরিয়ার ৩ হাজার ৮৬ জন কৃষকের কাছ থেকে সবজি সংগ্রহ করা হবে। ডুমুরিয়ার ভিলেজ সুপার মার্কেটে প্রক্রিয়াজাতকরণের পর প্যাকিং হবে সবজি। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। গত বুধবার কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিএফভিএপিইএ, এফবিসিসিআই’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ডুমুরিয়া সবজি ক্ষেত সরেজমিন পরিদর্শন শেষে কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ফ্রুট, ভেজিটেবল এ্যান্ড এ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এবং এফবিসিসিআই’র পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মেদ মনসুর, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘লী’ এন্টারপ্রাইজের প্রোফাইটার মোঃ আবুল হোসেন, এনএইচবি কর্পোরেশনের প্রোপাইটার মোঃ নাজমুল হায়দার ভূঁইয়া এবং সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সিনিয়র ম্যানেজার মোঃ মজিবুল হক। ডুমুরিয়ার ভিলেজ সুপার মার্কেটের সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কমডিটি ম্যানেজার (ফল ও সবজি) ড. নাজমুন নাহার সময়ের খবরকে জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় উত্তরণ সহায়ক হিসেবে ‘সফল’ প্রকল্পে কাজ করছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার দু’টি করে উপজেলায় এক লাখ ৬ হাজার কৃষক রয়েছেন এ প্রকল্পে। তবে সকলেই রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছেন না। ২০১৮ সাল থেকে যশোরের সবজি বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। যশোরের পাশাপাশি এখন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে সবজি রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ইউরোপিয়ান দেশসমূহের মধ্যে ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি এবং মধ্যপ্রাচ্যের কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে ডুমুরিয়ার এ সবজি রপ্তানি হবে। সাতক্ষীরার পাঁচশ’ জন চাষির উৎপাদিত আম ২০১৬ সাল থেকে রপ্তানি হচ্ছে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন সময়ের খবরকে বলেন, ডুমুরিয়াকে খুলনার শস্য ভান্ডার বলা হয়। এ অঞ্চলের শাক-সবজি, ফলমূল ও খাদ্য শস্য উৎপাদনে দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। বিষমুক্ত সবজি রপ্তানির সামর্থ্য রয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। ডুমুরিয়ার কৃষকদের উৎপাদিত সবজি রপ্তানির সুযোগ পেলে খুলনা অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। কৃষি অর্থনীতি ব্যাপক সমৃদ্ধি ঘটবে। বিএফভিএপিইএ’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর আলী জানান, প্রবাসে থেকেই দেশের টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল খেতে পারেন বাংলাদেশীরা। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি এসব পণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানি করছেন প্রায় দুইশ’ রপ্তানিকারক। খুলনার ডুমুরিয়ায় উৎপাদিত শাক-সবজি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। খুব অল্প সময়ের মধ্যে খুলনা থেকে শাকসবজি রপ্তানি শুরু হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এফবিসিসিআই’র পরিচালক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ডুমুরিয়ার কৃষকদের উৎপাদিত সবজি দেখেছি, সন্তোষজনক। তবে কিছু রিক্যুয়ারমেন্ট রয়েছে। যেমন : লাউ, চাল ও মিষ্টি কুমড়া অনুর্ধ্ব এক কেজি সাইজের হতে হবে। পটল ও কাকরোলের সাইজটা বড় হতে হবে। বেগুন ও শিম লাল রঙেরটাই পছন্দ। কৃষক ও কৃষি বিভাগের সাথেও কথা বলেছি-তারা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সবজি সরবরাহ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন। ফলে শিগগিরই ডুমুরিয়া থেকে সবজি রপ্তানি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কয়েকজন রপ্তানিকারকও সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ফলে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ, এখন কাজ শুরুর পালা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস